কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরে নাশকতার অভিযোগে দায়েরকৃত ৭টি মামলায় ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৮২০ জনকে। সব মিলিয়ে ৭টি মামলায় মোট আসামি ১ হাজার ৯৩৩ জন। যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।

Advertisement

এদিকে এসব মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদের অধিকাংশই বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে নাশকতার মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়। ক্ষতির পরিমাণ দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা। এসআই এমএ হান্নান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

গত ১৭ জুলাইয়ের ঘটনায় দিনাজপুর সরকারি কলেজে নাশকতার মামলায় ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন মুর্শেল হক চৌধুরী রক্তিম। ক্ষতির পরিমাণ দেওয়া হয় ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

গত ১৮ জুলাই দিনাজপুরে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা ৮০ জন আসামির কথা বলা হলেও কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি। ক্ষতির পরিমাণ দেওয়া হয় ২৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। বাদী হয়েছেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান জুয়েল।

একই দিন ১৮ জুলাই দিনাজপুর শহরের লিলির মোড়ে নাশকতার অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ভাঙচুরে ১ লাখ টাকা ক্ষতিসাধনের উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার বাদী হয়েছেন এসআই মো. মাজেদুল ইসলাম।

দিনাজপুর পৌর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা ও ভাঙচুর এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাদী হয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোকসেদুর রহমান শাহজাদা।

সর্বশেষ দিনাজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ মো. শাহ আলম তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ২৫ জুলাই একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৫শ জনকে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

অপরদিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানায় নাশকতার ঘটনায় ঘোড়াঘাট থানার এসআই আব্দুল আউয়াল ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

প্রত্যেকটি মামলায় বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

এদিকে এসব মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শহরেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিনাজপুর শহরের জেল রোডের জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সুনসান অবস্থা। কার্যালয় এবং এর আশপাশে পাওয়া যায়নি বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে।

বৃহস্পতিবার দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দিনাজপুরে আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও শিবিরের নেতাকর্মীরা।

তিনি বলেন, জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, এসব মামলায় ইতোমধ্যে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচিসহ ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের প্রায় সবাই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।