নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে গৃহবধূকে নির্যাতন, ইউপি সদস্যসহ দুজন গ্রেপ্তার

নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে গৃহবধূকে নির্যাতন, ইউপি সদস্যসহ দুজন গ্রেপ্তার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার দুটি মামলায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগ (৪২) ও মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি সাজু (২১)। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার একলাশপুর এলাকা তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে গৃহবধূ নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা দুটি মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরী জানান, রাতে অভিযান চালিয়ে একলাশপুর থেকে ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগকে এবং পৃথক স্থান থেকে সাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সোহাগ এজাহারভুক্ত আসামি নন। এর আগে দুটি মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মো. রহিম ও রহমত উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল সোমবার নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (আমলী আদালত-৩) বিচারক মাশফিকুল হক এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মামলার ১ নম্বর আসামি বাদলকে গতকাল রাতে বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে র‍্যাব-১১-এর সদস্যরা। বাদল, সাজু ও সোহাগকে আজ আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগী নারী (৩৭) মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। ঘটনার ৩২ দিন পর গত রোববার ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে, অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলাতেই নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- বাদল, মো. রহিম, আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা। তাঁদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে। তাঁরা সবাই একলাশপুরের দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য। মামলায় দেলোয়ারের নাম নেই। তবে দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে (২৬) অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। পরে তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, মামলার প্রধান আসামি বাদলকেও (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাব-১১-এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘রোববার গভীর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল এলাকায় একটি বাসে অভিযান চালিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে রাতেই বাদলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। রাতে র‍্যাবের পক্ষ থেকে খুদেবার্তায় জানানো হয়, প্রধান আসামি দেলোয়ারের মাছের খামার থেকে সাতটি তাজা ককটেল, দুটি ১২ বোরের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে ঘটনাটি গতকাল হাইকোর্টের নজরে আনার পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ ঘটনাটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা ভিডিও ফুটেজ সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন। সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে দিয়ে ফুটেজটি সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছেন আদালত। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটিতে রয়েছেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ। ঘটনা অনুসন্ধান করে তাঁদের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে ২৮ অক্টোবর আদালতকে প্রতিবেদন দিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জ থানার ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শার্শায় গৃহকর্মীকে ধর্ষণ, গৃহকর্তার ছেলে গ্রেপ্তার পূর্ববর্তী

শার্শায় গৃহকর্মীকে ধর্ষণ, গৃহকর্তার ছেলে গ্রেপ্তার

স্বাস্থ্যের আবজাল দম্পতির ৩৪ কোটি টাকা বিদেশে পাচার পরবর্তী

স্বাস্থ্যের আবজাল দম্পতির ৩৪ কোটি টাকা বিদেশে পাচার

কমেন্ট