খালাস চেয়ে মিন্নির আপিল গ্রহণ, অর্থদণ্ড স্থগিত
বরগুনার মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাঁর ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ডাদেশ স্থগিত করেছেন আদালত।
আজ বুধবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম।
এ বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছি। আপিল গ্রহণ করে আদালত মিন্নির অর্থদণ্ড স্থগিত করেছেন। আমরা উল্লেখ করেছি, এটি ভুল রায়। রায়ের প্রতিটি লাইনের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘মিন্নিকে মূলত দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দির আলোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অথচ এ জবানবন্দির বিরুদ্ধে মিন্নি পরক্ষণেই আদালতকে বলেছিলেন। মিন্নি এই জবানবন্দি অস্বীকার করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে, জোরপূর্বকভাবে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। কেননা, জবানবন্দি রেকর্ড করার আগে জেলা পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে মিন্নির দোষ স্বীকার বিষয়টি প্রকাশ করেন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’
এর আগে গত ৬ অক্টোবর বরগুনার আলোচিত মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির খালাস চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল জমা দেন তাঁর আইনজীবীরা। আজ আপিল গ্রহণের ওপর শুনানি শেষে আদালত আপিল গ্রহণ করেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)। একই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
রায়ে খালাসপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)।
৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ৪২৯ পৃষ্ঠার রায়ের কপি প্রকাশ করেন বিচারিক আদালত। রায়ের কপি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির পরিবারকে দেওয়া হয়। এর পরের দিন ৪ অক্টোবর নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির রায়ের নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছে। পুলিশের বিশেষ পাহারায় রিফাত হত্যা মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসেন বরগুনা কোর্টের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর। নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) উচ্চ আদালতে মামলার যাবতীয় কার্যক্রমের নথি পাঠানো হয়।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করে দুইভাগে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন শিশু আসামি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার ২৪ আসামির মধ্যে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। এরপর গত ২৭ অক্টোবর হত্যা মামলার ১৪ কিশোর আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। রায়ে ছয়জনকে ১০ বছর করে, চারজনকে পাঁচ বছর করে ও একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। খালাস দেওয়া হয় তিনজনকে।
কমেন্ট