বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় কমনওয়েলথ
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে চিত্রনায়িকা পরীমনি
চিত্রনায়িকা পরী মণি, প্রযোজক মো. নজরুল ইসলাম রাজসহ চারজনকে পৃথক দুই মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশিদ এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজ আসামিদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন।
রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে পরী মণিকে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে আদালতে তোলেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময়ে তাঁকে একনজর দেখার জন্য আইনজীবীরা ভিড় করেন। আদালত কক্ষ ভর্তি হয়ে যায় আইনজীবী ও উৎসুক লোকদের ভিড়ে। পরে পরী মণিকে এজলাসের আসামির ডকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সাদা শার্ট পরা এক যুবককে জড়িয়ে ধরেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ যুবককে সরিয়ে দেন। এরপরে নারী পুলিশ সদস্যরা পরী মণিকে ঘিরে ফেলেন। আদালতে বিচারক আসন গ্রহণ করলে আইনজীবীদের মধ্যে মামলা পরিচালনা নিয়ে বিবাদ বাধে। অনেকে পরী মণির মামলা করতে চান। এ সময় ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান রচি ও গোলাম কিবরিয়া জোবায়ের মামলা পরিচালনা করতে চান, অপর দিকে অ্যাডভোকেট নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীও মামলা পরিচালনা করতে চান। পরে বিচারক হট্টগোলের মধ্যে এজলাস ত্যাগ করেন। পরী মণিকে আইনজীবীর বিষয়ে বললে তিনি নীলাঞ্জনা রিফাতকে দিয়ে মামলা পরিচালনা করার কথা বলেন। এরপরে বিচারক আবার এজলাসে উঠলে শুনানি শুরু হয়।
পরে রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল। অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী। তিনি আদালতকে বলেন, পরী মণির ক্যারিয়ার ধ্বংসের জন্য চক্রান্ত চলছে। তাঁর বাসায় কোনো ধরনের মদ পাওয়া যায়নি। এগুলো সব সাজানো। এগুলো সব চক্রান্ত।
শুনানির সময় পরী মণি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বিকেলে পরী মণি, প্রযোজক নজরুল রাজসহ চারজনকে বনানী থানায় সোপর্দ করে র্যাব। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়। একটি মামলায় পরী মণি ও তাঁর ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম ওরফে দীপুকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ৩৬ (১) এর সারণি ২৪(খ)/ ৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক)/৪২(১)/৪১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা নম্বর পাঁচ।
আরেকটি মামলায় নজরুল রাজ ও তাঁর ব্যবস্থাপক মো. সবুজ আলীকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ (১) এর সারণি ২৪(খ)/ ৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক)/৪১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা নম্বর ছয়। মামলার পরে চারজনকে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
মামলার আগে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আজ দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গতকাল বুধবার বিকেলে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে পরী মণির বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজের বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মাদক ও সিসার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।’
প্রযোজক নজরুল রাজের বনানীর বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। ছবি : স্টার মেইল
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পরী মণির বাসায় অভিযান পরিচালনা করি। তাঁর বাসায় একটি মিনিবার পাওয়া যায়। আমরা তাঁর বাসা থেকে ১৯টি বিদেশি মদের বোতল, এলএসডিসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছি। এ জন্য শামসুন নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতি মণি ওরফে পরী মণির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হবে।
পরী মণির সহযোগী ও রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজের বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজের কাছ থেকে আমরা মাদক ও বেশ কিছু ডিজিটাল কনটেন্ট উদ্ধার করেছি। সেগুলো দিয়ে তিনি বিভিন্ন লোককে ব্ল্যাকমেইল করতেন। এজন্য রাজের বিরুদ্ধে মাদক ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নজরুল রাজের সিন্ডিকেট রাজধানীর গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় ডিজে পার্টির আয়োজন করত। এসব পার্টিতে অনেক অবৈধ কর্মকাণ্ড তৈরি হতো। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার করত। নজরুল রাজের ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’র কার্যালয়ে বিভিন্ন অপকর্ম হতো। তিনি কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতার নাম জানিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন নাম উঠে এসেছে। সেগুলো আমরা যাচাই করছি। তদন্তের স্বার্থে এসব এখনই বলছি না। কারা আসতো-যেতো সেগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না যাচাই-বাছাই করছি। তদন্তের স্বার্থে এখন বলছি না। ১৯টি বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে পরী মণির বাসা থেকে। সামগ্রিকভাবে আমরা তদন্ত করছি। পরী মণির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং রাজের বিরুদ্ধে মাদক ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পরী মণির মদ খাওয়ার লাইসেন্স থাকলেও তা ছিল মেয়াদ উত্তীর্ণ।
কমেন্ট