গুমের বিরুদ্ধে আইন করায় সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই : আইন উপদেষ্টা
চালের দাম পাইকারিতে কমছে, খুচরা বাজারে প্রভাব নেই
চাল ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যে বৈঠক, প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি ও অভিযান শুরুর পর রাজধানীর পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমছে। কিন্তু সে অনুযায়ী খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব এখনো পড়েনি। তবে আগামী দুসপ্তাহের মধ্যে চালের দাম খুচরা বাজারেও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কারওয়ানবাজার, বাবুবাজারসহ কয়েকটি চালের দোকান ঘুরে দেখা যায়, গত তিন থেকে চার দিনে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মোটা ও চিকন চালের দাম কমেছে মাত্র ২ থেকে ৩ টাকা। যেখানে কোরবানি ঈদের পর কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা করে বেড়ে যায়। কিন্তু পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা দাম কমলেও খুচরা বাজারে চালের দাম কমার প্রভাব তেমনটা পড়েনি এবং অনেক পাড়া-মহল্লার দোকানে আগের সেই চড়া দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে চাল।
বর্তমানে রাজধানীর চালের পাইকারি আড়ত বাবুবাজারে ৫০ কেজি ওজনের বস্তাপ্রতি নাজিরশাইল ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা, মিনিকেট ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা, আটাশ ২ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা এবং গুটি ও স্বর্ণা ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে কারওয়ান বাজারে একই চাল বস্তা প্রতি নাজিরশাইল মানভেদে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, মিনিকেট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, আটাশ ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং গুটি ও স্বর্ণা ২ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে, যা বাবুবাজারের থেকে একটু বেশি।
টিসিবির তথ্যানুযায়ী, ২১ সেপ্টেম্বর সরু চাল প্রতি কেজি ৬২ থেকে ৬৮ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫৫ থকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছর এই সময়ে সরু চাল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং মোটা চাল ৩৩ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়।
চালের দাম কমার বিষয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন মিলে সরকার অভিযান চালানো অব্যাহত রাখায় গত কয়েক দিনে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে কমেছে। অভিযান চলতে থাকলে দাম আরো কমবে।
তবে চালের দাম এখনো সেভাবে কমেনি। মিলগেটে প্রথমে চালের দাম কমলে এর দ্রুতই প্রভাব পড়ে পাইকারি বাজারগুলোতে। পাইকারি বাজার থেকে চাল খুচরা বাজারে নিয়মিত গেলেও সেখানে প্রভাব পড়তে বেশ সময় লাগে। কারণ খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে আগের কেনা চাল রয়ে গেছে বলতে বলতেই খানিকটা সময় নেন। এ ছাড়া মোকাম থেকে চালের সরবরাহ বাড়বে চালের দাম তত কমতে থাকবে। কারণ পাইকারি ও খুচরা বাজারের চালের দামটা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে মোকামের মালিকেরা। তারা যেভাবে দাম ধরে দেয় ব্যবসায়ীরা সেভাবে বিক্রি করে। চালের সরবরাহ ভালো থাকলে ও মোকাম নিয়ন্ত্রণ করলে চালের দাম কমবেই বলেও জানান তারা।
এদিকে ক্রেতারা চালের দাম নিয়ে অনেকটাই ক্ষুব্ধ। তারা জানান, চালের বাজারে দীর্ঘদিনের অস্থিরতায় সাধারণ মানুষকে বাড়তি খরচের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই ক্রেতারা এখন আর ব্যবসায়ীদের কথায় ভরসা রাখতে পারছে না। কারণ ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে কয়েকদিন দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায়। চালের দাম যে হারে বেড়েছে, সে হারে কমছে না। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের পকেট কাটছেন।
কোরবানির পর থেকে কোনো কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়তে থাকলে সে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী সারা দেশে চালের গুদামে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। এর পরই অভিযানে নামে টাস্কফোর্স। নড়েচড়ে বসে অবৈধ চাল মজুদদারেরা। অভিযানে দোষী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেল, জরিমানা ও মামলা করা হয়। এ পর্যন্ত অবৈধ মজুদের অভিযোগে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৬০০ ডিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
এ ছাড়া পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক করতে ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মিল মালিক, আমদানিকারক ও আড়তদারদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্যমন্ত্রী। বৈঠকের পর বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করে।
কমেন্ট