রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা আগামী মে মাসের মাঝামাঝিতে শেষ হবে: আলী রীয়াজ
চীনকে বাদ রেখে বাকি সব দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প
চীনকে বাদ রেখে বাকি সব দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্প নমনীয় হলেও চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, বিশ্বের সব দেশের ওপর শুল্ক কার্যকর করার সিদ্ধান্তে ৯০ দিনের বিরতি থাকবে। শুধু চীনের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
অর্থাৎ মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও যেটা অসম্ভব মনে হচ্ছিল, সেটাই এখন বাস্তব হিসেবে ধরা দিল।
ট্রাম্পের দাবি, ৭৫টিরও বেশি দেশ শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আলোচনায় বসেছে। তাই ৯০ দিনের এই বিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সময়ে একটি হ্রাসকৃত অর্থাৎ মাত্র ১০ শতাংশ প্রতিশোধমূলক ট্যারিফ চালু থাকবে।
তবে চীনের বিষয়ে ট্রাম্প জানান, সর্বশেষ ১০৪ শতাংশ ট্যারিফ বৃদ্ধি করে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘বিশ্ববাজারের প্রতি চীনের অসম্মানজনক আচরণের জবাবে আমরা এই পদক্ষেপ নিচ্ছি’।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘চীন চুক্তি করতে চায়। কিন্তু ঠিক কোন পথে তা করতে হবে, তা তারা জানে না... তবে তারা এটা বুঝে নেবে। আশা করি খুব শীঘ্রই চীন বুঝবে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশকে ঠকিয়ে চলা আর টেকসই নয় এবং এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়’।
ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ট্রাম্প অসাধারণ সাহস দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের সমস্ত দেশকে জানিয়েছিলাম—পালটা ব্যবস্থা না নিলে তোমরা পুরস্কৃত হবে। সুতরাং, যারা আলোচনায় আসতে চায়, আমরা তাদের কথা শুনতে প্রস্তুত।
কেন এই বিরতি?
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের দলের অভ্যন্তরীণ চাপ ও ব্যবসায়িক মহল থেকে ট্যারিফ বন্ধের অনুরোধ আসছিল। কারণ, এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ ও মন্দার আশঙ্কা তৈরি করেছিল।
তবু ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমার নীতিতে পরিবর্তন আসবে না’।
তবে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ে উদ্বেগ বেড়ে ওঠে, বিশেষ করে বন্ড মার্কেট নিয়ে। আর এটাই শেষপর্যন্ত ট্রাম্পকে তার সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য করেছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং হোয়াইট হাউজের অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা তাকে মার্কেট পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
ট্রাম্প পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বন্ড মার্কেট জটিল জিনিস... আমরা এটা হৃদয় থেকে লিখেছি, আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়াই’।
বেসেন্ট বলেন, এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয় যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যকে গুরুত্ব দেন এবং আমরা সৎভাবে আলোচনা করতে চাই।
বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, ট্রাম্প যখন ট্রুথ সোশ্যাল-এ এই বার্তাটি লিখছিলেন, তখন তিনি এবং বেসেন্ট তার সঙ্গে ছিলেন।
লুটনিক বলেন, স্কট বেসেন্ট এবং আমি প্রেসিডেন্টের পাশে বসে ছিলাম, যখন তিনি তার প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ট্রুথ পোস্টটি লেখেন। বিশ্ব এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, কিন্তু চীন ঠিক উল্টো পথে হাঁটছে।
শেয়ারবাজারে প্রতিক্রিয়া
এদিকে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই ঘোষণার পরপরই ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ারবাজার উর্ধ্বগামী হয়ে ওঠে। ডাও জোন্স সূচক প্রায় ২,৫০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়, যা ৮ শতাংশ বৃদ্ধির সমান। নাসডাক ১২.২ শতাংশ বেড়ে ২৪ বছরের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স করে এবং এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ৬ শতাংশ বেড়ে ৫,২৮১.৪৪ পয়েন্টে পৌঁছায়।
তেল ও ডলারের দামও বেড়ে গেছে। যার ফলে বৈশ্বিক বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
কমেন্ট