ভাতিজাকে মেরে মাটিচাপা, আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন চাচি

ভাতিজাকে মেরে মাটিচাপা, আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন চাচি

মাদারীপুরের শিবচরে ২ বছর ৪ মাস বয়সী ভাতিজাকে মেরে টয়লেটের মেঝেতে পুঁতে রাখার ঘটনায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন অভিযুক্ত চাচি। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল চাচি নার্গিস আক্তার ও চাচাতো বোন হাফসা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে নিজের মেয়েকে শিবচরের চাচার বাড়ি পাঠিয়ে ভাতিজা কুতুবউদ্দিন নামের শিশুটিকে পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুরের জাজিরায় নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন নার্গিস।

আজ শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আমীর হোসেন সেরনিয়াবাদ।

তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অপহরণের শিবচর উপজেলার জাজিরার নাওডোবা এলাকায় চাচার বাড়ির ভবনের নির্মাণাধীন টয়লেটের মেঝের নিচ থেকে শিশু কুতুবউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা হলে শিশুটির আপন বড় চাচি নার্গিস আক্তার ও তার মেয়ে হাফসা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে তাদের মাদারীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এসময় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইদুর রহমান নার্গিস আক্তারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তবে নার্গিস আক্তারের মেয়ে হাফসা আক্তারের বয়স মাত্র ১৩ বছর হওয়ায় তার জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। তাকে আদালতের কিশোরী জেলে রাখা হয়েছে। আগামীকার রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) হাফসা আক্তারকে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।

স্থানীয়, পারিবারিক ও মামলার সূত্রে জানা যায়, শিবচরের কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার ওহাব বেপারির বড় ছেলে আবুল হোসেন বেপারির মৃত্যুর পর স্ত্রী নার্গিস ২ ছেলে-মেয়ে নিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকায় বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। স্বামীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তিনি শ্বশুরসহ ওই বাড়ির লোকদের দায়ী করতেন। এছাড়াও স্বামীর মৃত্যুর পর তার ছোটভাই ইসমাইল বেপারিকে নার্গিস বিয়ে করতে চাইলে পরিবারটি এতে রাজি হয়নি। জমিজমা নিয়েও বিরোধ ছিল এদের মাঝে। গত মঙ্গলবার ওহাব বেপারির বাড়ি অর্থাৎ দাদার বাড়িতে বেড়াতে যায় নার্গিস আক্তারের মেয়ে হাফসা আক্তার (১৪)। পরদিন বুধবার সকালে মা ফোন দিলে হাফসা বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। চলে যাওয়ার আগে হাফসা চাচাতো ভাই কুতুবউদ্দিনকে কোলে নেয়। একটু ঘুরে আসার কথা বলে হাফসা কুতুবউদ্দিনকে নিয়ে চলে যায়। কুতুবউদ্দিন ইসমাইল বেপারি ও ময়না বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান।

পরে কুতুবউদ্দিনকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। যেহেতু হাফসা শিশুটিকে কোলে নিয়ে বের হয়, কাজেই তাদের বাড়িতে যান ইসমাইল বেপারি। সেখানে না পেয়ে তিনি শিবচর থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে শিবচর থানার একাধিক টিম মাঠে নামে। একটি মাদরাসার সিসিটিভি দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় হাফসা কুতুবউদ্দিনকে নিয়ে তার মা নার্গিসের কাছে দেয়। নার্গিস শিশুটিকে কাপড়ে ঢেকে সটকে পরে। কিন্তু কোন কিছুতেই নার্গিস বিষয়টি স্বীকার করছিল না। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নার্গিস তার ঘরের ভেতরের মধ্যে নির্মাণাধীন টয়লেটের মাটির নিচে শিশুটিকে পুতে রাখা হয়েছে বলে জানায়। পরে পুলিশ নার্গিসকে নিয়ে শুক্রবার ভোররাতে তার ঘরের টয়লেটের মেঝের নিচ থেকে কুতুবউদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে।

কমেন্ট