এবার একসঙ্গে পাঁচ ধর্ষণ মামলার রায় দিলেন সেই বিচারক
সুনামগঞ্জে অপহরণের পর ধর্ষণের আলোচিত পাঁচটি মামলার রায় একসঙ্গে দিয়েছেন আদালত। এসব মামলার রায়ে পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই রায় দেন।
যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামিরা হলো সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের রিপন মিয়া, ধর্মপাশা উপজেলার ফাতেমানগর গ্রামের রোকন মিয়া, জগন্নাথপুর উপজেলার ইছাকপুর গ্রামের শাহিন মিয়া, সদর উপজেলার ইছাগড়ি গ্রামের শৈলেন দাস ও বিশ্বম্ভরপুর থানার মিয়ার চর গ্রামের আসাদ মিয়া।
বিজ্ঞাপন
আসাদ মিয়ার বাবা ইদন মিয়া ও মা জগৎ বানুকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
একসঙ্গে পাঁচ অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার এ রায়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা।
এর আগে এই আদালতের বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শিশুদের প্রবেশনসহ স্বামী ও স্ত্রীদের মামলায় সংসার করার শর্তে স্বামীদের জামিন দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এবার একসঙ্গে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে ফের আলোচনায় আসেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৫ আগস্ট সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের রিপন মিয়া তেরাপুর গ্রামের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই কিশোরী গর্ভবতী হয়ে এক পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করার পর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে রিপন মিয়াকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
ধর্মপাশা উপজেলার ফাতেমানগর গ্রামের রোকন মিয়া ২০১১ সালের ২ এপ্রিল একই গ্রামের এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের পর ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা থানায় মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে আসামি রোকন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর জগন্নাথপুর উপজেলার ইছাকপুর গ্রামের শাহিন মিয়া উপজেলার হারগ্রাম গ্রামের এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ করে সিলেটের ভোলাগঞ্জে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে আসামি শাহিন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
২০১৩ সালের ১৫ মার্চ সদর উপজেলার ইছাগড়ি গ্রামের শৈলেন দাস এক স্কুলছাত্রীকে জোর করে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করার পর পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে শৈলেন দাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
২০১৫ সালের ১৯ মার্চ বিশ্বম্ভরপুর থানার মিয়ার চর গ্রামের আসাদ মিয়া আমড়িয়া গ্রামের এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে আপহরণের পর ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা আসাদ মিয়ার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করেন। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে আসাদ মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, ‘আদালত একসঙ্গে পাঁচটি মামলার যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। বিচারক বিভিন্ন সময়ে সাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করেছেন। বাদী-বিবাদীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর পরও উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আলোচিত এই রায় দিয়েছেন তিনি। এই রায়ের ফলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে সমাজে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনা কমবে।
কমেন্ট