নবম ওয়েজবোর্ডে আয়কর-আনুতোষিক নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ অবৈধ
সংবাদপত্রের সাংবাদিক, কর্মচারীদের নবম ওয়েজবোর্ডে আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) ও আয়করসংক্রান্ত মন্ত্রিসভার সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে সাংবাদিক, কর্মচারীদের আয়কর আগের মতোই কৃর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। আর বছরে মূল বেতনের সমান দুটি গ্র্যাচুইটি পাবেন সাংবাদিক-কর্মচারীরা।
নবম ওয়েজবোর্ডের দ্বাদশ অধ্যায়ে মন্ত্রিসভা কমিটির ‘আয়কর’ ও ‘আনুতোষিক’ সংক্রান্ত দুটি সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে রবিবার এ রায় দেন বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর বেঞ্চ।
আদালতে রিটের পক্ষে রুল শুনানি করেন আইনজীবী কাজী আকতার হামিদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ও দিদারুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
আইনজীবী দিদারুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, “এ রায়ের ফলে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক কর্মচারীদের আয়কর আগের মতোই মালিকপক্ষকে দিতে হবে। আর বছরে মূল বেতনের সমান দুটি গ্র্যাচুইটি পাবে সাংবাদিক কর্মচারীরা। ”
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে নবম সংবাদপত্র চেয়ার ওয়েজবোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শের পর ‘নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ’ চূড়ান্ত করে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তা তথ্য মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করে সরকার।
সে প্রজ্ঞাপনের সপ্তম অধ্যায়ের ৩ নম্বর শর্তে বলা আছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বেতনের ওপর আরোপিত আয়কর সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে। ’
একই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণ প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশবিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বেশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রাপ্য হবেন। ’
অথচ প্রজ্ঞাপনে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, কার্যকারণ ও প্রয়োগ’ শিরোনামের দ্বাদশ অধ্যায়ের ৪ নম্বর শর্তে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিক, কর্মচারীদের নিজেদের আয় থেকে আয়কর পরিশোধ করবেন এবং বছরে মূল বেতনের সমান একটি গ্র্যাচুইটি পাবেন।
নবম ওয়েজবোর্ডের মন্ত্রিসভা কমিটির এই সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুজ্জামান। তখন রিটটির প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল দেন। আয়কর ও গ্র্যাচুইটি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্যসচিব ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সে রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর সুপারিশ দুটিকে অবৈধ ঘোষণা করলেন উচ্চ আদালত।
কমেন্ট