পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত আনতে এশীয় ব্যবস্থাপনা গড়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত আনতে এশীয় ব্যবস্থাপনা গড়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

এশিয়ার দেশগুলোকে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত আনার একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, দুর্নীতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর ১ ট্রিলিয়ন ডলার হারায়, যা তারা পাওয়া মোট উন্নয়ন সহায়তার বহুগুণ বেশি। এশিয়ার উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত দেওয়ার জন্য একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।'

পরিবর্তনশীল বিশ্বে এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সঙ্গে জড়িত এবং যৌথ ভবিষ্যৎ ও সমৃদ্ধির জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।  

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের হাইনানে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া ২০২৫-এর বার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ড. ইউনূস। তিনি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান— অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, কৃষি ও প্রযুক্তি সহযোগিতা।  

অর্থনৈতিক সহযোগিতা 

ড. ইউনূস বলেন, এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এই অঞ্চলের বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে একটি নির্ভরযোগ্য তহবিল গঠন করা উচিত, যা এশিয়ার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে।  

বাণিজ্য সহযোগিতা  

এশিয়াকে বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দুর্বল সংযোগ বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই, বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।  

খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা 

ড. ইউনূস খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশীয় কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে এবং টেকসই কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। এছাড়া, জলবায়ু-বান্ধব ও পুনরুত্পাদনশীল কৃষি উদ্ভাবনের ওপর জোর দেন তিনি।  

প্রযুক্তি সহযোগিতা  

ড. ইউনূস বলেন, এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমবণ্টনমূলক হবে। জ্ঞান ও তথ্য বিনিময়, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ডিজিটাল সমাধানে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।  

তরুণ প্রজন্ম ও সামাজিক ব্যবসা 

এশিয়ার ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত করতে তরুণ প্রজন্মের মেধা ও শক্তিকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি গড়তে হবে, যেখানে সমাজ হবে আত্মনির্ভরশীল ও টেকসই। আমাদের একটি শূন্য-অপচয় জীবনধারা গড়তে হবে, যেখানে ভোগ্যপণ্য শুধু মৌলিক প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকবে।"  

তিনি সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই মডেল এখন ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধের সমন্বয় ঘটেছে। বোয়াও ফোরামসহ এশিয়ার অন্যান্য উদ্যোগগুলোর উচিত তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহযোগিতা আরও জোরদার করা, যাতে তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত এশিয়া গড়তে পারে।  

তিন-শূন্য নীতি  

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, প্রত্যেক তরুণকে তিন-শূন্য ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে— শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।  

তিনি বলেন, এটাই আমাদের যৌথ ভবিষ্যৎ, যা আমরা এশিয়ায় একসঙ্গে গড়ে তুলতে পারি।

চার দিনের সরকারি সফরে চীনে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা পরবর্তী

চার দিনের সরকারি সফরে চীনে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

কমেন্ট