আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা
চুলে খুশকি কেন হয়, প্রতিরোধের উপায় কী
চুলে খুশকি আমাদের শরীরের অন্যতম একটি সমস্যা। খুশকি হলে মাথায় প্রচণ্ড চুলকানিসহ নিয়মিত চুল পড়তে পারে। আর শীতকালে এই সমস্যার তো অন্ত নেই। মাথার ত্বক বা স্কাল্পে এক ধরনের ফাঙ্গাস অতিরিক্ত হওয়ার কারণে এটি হয়ে থাকে।
চলুন জেনে নিই খুশকি হওয়ার কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে।
মাথার ত্বক বা স্কাল্পে একটা সাধারণ চক্র হিসেবে সবসময় কিছু নতুন কোষ উৎপন্ন হয় এবং কিছু পুরনো কোষ ঝরে যায়। তবে পুরনো মরা কোষ জমে গিয়ে সাদা আঁশের মতো গুঁড়া পড়তে থাকলে আমরা তাকে খুশকি বলে থাকি। এ সময় অনেক চুলকানি হয়।
স্ক্যাল্পের শুষ্ক চামড়ায় ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ফাঙ্গাস অতিরিক্ত হওয়ার কারণেই খুশকি হয়ে থাকে। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই-
খুশকি হওয়ার কারণ
প্রকৃতপক্ষে খুশকি কোনো রোগ বা রোগের লক্ষণ নয়। মাথার লোমকূপে ময়লা জমে এবং ছত্রাকের প্রভাবে সাধারণত খুশকি হয়ে থাকে। নিম্নে খুশকি তৈরি হওয়ার কিছু অবস্থা বর্ণনা করা হলো।
শুষ্ক ত্বক
শীতের সময় আবহাওয়ায় আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে দেহের ত্বকের পাশাপাশি মাথার ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়। আর এ কারণেই খুশকি বেশী হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ সময় বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস ও ঘরের তুলনামূলক গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রার অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। এ অসামঞ্জস্যতার কারণেও খুশকি হতে পারে।
চুল না আঁচড়ানো
চুল যথেষ্ট পরিমাণে না আঁচড়ালেও খুশকি হতে পারে।
যদি চুল কম আঁচড়ানো হয় তাহলে মাথার ত্বকের চামড়ার ঝরে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। ফলে মাথায় খুশকির সৃষ্টি হয়।
মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার
যারা মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করে তাদের খুশকির সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করলে চুলের গোড়ায় জমা হয়ে পরবর্তীতে সেখানে ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব ঘটে, যার ফলে মাথায় খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়।
শ্বেত প্রদর জাতীয় অসুখে আক্রান্ত হলে
ঈস্ট জাতীয় (শ্বেত প্রদর জাতীয়) অসুখ বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে এরূপ ব্যক্তিদের খুশকির প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যায়। মহিলাদের এ সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ও ঈস্ট কাউন্টারএক্ট করে ও খুশকি হওয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করলে
যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করা হয় তাহলে মাথার ত্বক অপরিষ্কার থাকে। এর ফলেও মাথায় খুশকির উৎপত্তি হতে পারে।
সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবে
সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবও খুশকির অন্যতম কারণ। যদি গৃহীত খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি ও জিংক না থাকে তাহলেও খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া অধিক পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলেও খুশকি হতে পারে।
ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে
সকলের স্ক্যাল্পেই ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ফাঙ্গাস অল্প পরিমাণে থাকে এবং তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসটির পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা ত্বকের ক্ষরিত তেল শোষণ করে নেয়। এর ফলে স্ক্যাল্প অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ উৎপাদন করে থাকে। এ সকল অতিরিক্ত কোষ মৃত হলে স্ক্যাল্প ও চুলের তেলের সঙ্গে মিশে খুশকির সৃষ্টি করে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
অতিরিক্ত মানসিক চাপও খুশকির একটি অন্যতম কারণ। যারা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকেন তাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের খুশকি বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিশেষ কিছু রোগ যেমন- পারকিন্সন ডিসিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, সেন্সিটিভ ত্বক ও ত্বকের সমস্যা (সোরিয়াসিস, একজিমা) ইত্যাদি যাদের রয়েছে তাদেরও খুশকির প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এক গবেষণায় পাওয়া যায় যে ১০.৬% মানুষ যাদের এইচআইভি আছে তাদের খুশকির সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
পানির সমস্যার কারণে
অনেকসময় পানির সমস্যার কারণেও খুশকি হতে পারে। যদি পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ত্বক তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায় যা মাথায় খুশকির কারণ হয়ে ওঠতে পারে।
খুশকির চিকিৎসা
মাথার ত্বকে ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ কমিয়ে আনা বা নষ্ট করতে পারলেই খুশকি কমে যাবে। তাই খুশকি দূর করার জন্য ডাক্তারগণ একমাত্র বিজ্ঞানভিত্তিক ছত্রাকনাশক শ্যাম্পু কিটাকোনাজল ২% ব্যবহারের উপদেশ দিয়ে থাকেন।
এই শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়ম হলো চুল ধুয়ে তাতে কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ২ বার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমে যাবে। যাদের নিয়মিত খুশকি হয় তারা ১ বা ২ সপ্তাহ পর পর প্রতিরোধক হিসেবে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে তারা দীর্ঘদিন খুশকিমুক্ত থাকতে পারবেন।
এ ছাড়া শ্যাম্পুটি তৈলাক্ত সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান নিঃসরণ কমিয়ে আনে যার ফলে খুশকি দূর হয়। এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি কমে, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারে। যদি কারো ফাঙ্গাল বা অন্যান্য একজিমা জাতীয় অসুখ না থাকে তাহলে এই শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি ৯৫% ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। অবশ্য যদি ইনফেকশন হয়ে যায় বা চুলকানি বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা লাগতে পারে।
খুশকি প্রতিরোধে করণীয়
যাদের প্রায়ই খুশকি হয় তারা নিয়মিত চুলে পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
বাইরে বের হলে ধুলোবালি মাথায় জমে খুশকির প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তোলে। তাই এই সমস্যা দূর করতে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করা যেতে পারে।
চুলের খুশকি নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য মাথার ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে এবং চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
চুল অপরিষ্কার থাকলেই খুশকি বেশি হয়। তাই নিয়মিত চুল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
ভেজা অবস্থায় চুল বেঁধে রাখা ঠিক না। এ জন্য গোসলের পর যত দ্রুত সম্ভব চুল ভালো করে মুছে নিতে হবে। প্রয়োজনে ধীরে ধীরে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিতে হবে। এ ছাড়া চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নেওয়া ভালো।
খুশকি হলে দ্রুত তার প্রতিকার করা দরকার। নইলে এই সমস্যা থেকে চুলপড়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই খুশকি প্রতিরোধে শ্যাম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও খাবারের বিষয়েও সমান মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
কমেন্ট