চ্যাটজিপিটি উত্তাল, কিন্তু কেন!
২০২২ সালের নভেম্বর। ওপেনএআই চালু করল চ্যাটজিপিটি; যা ছিল ভোক্তাভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নব্য মাইলফলক। ৩৮ বছর বয়সে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠাতা প্রধান স্যাম অল্টম্যান জীবনে জটিল সময়টা যেন অতিক্রম করলেন। যখন তাঁকে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকেই বহিষ্কার করা হয়। পাঁচ দিনের নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের পর কর্মীদের দাবির মুখে নিজের অবস্থানে ফেরেন অল্টম্যান। টানা পাঁচ দিন কার্যত প্রযুক্তিবিশ্বের নজর ছিল ওপেনএআই আর মাইক্রোসফটের দিকে নিবদ্ধ।
১৮ অক্টোবর ব্লুমবার্গের খবরে জানা যায়, পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে, বিশেষ করে ইলিয়া সাটসকেভারের সঙ্গে অল্টম্যানের মতের তীব্র অমিলের প্রেক্ষাপটেই তাঁর ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওপেনএআই প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মিরা মুরাতিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস টুইচের প্রতিষ্ঠাতা এমেট শিয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্যাম অল্টম্যানকে ছাঁটাই করার খবরে বিনিয়োগকারী ও প্রযুক্তি দুনিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ওপেনএআই কর্মীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ছাঁটাইয়ের দু’দিন পর ২০ নভেম্বর ওপেনএআই অফিসে ‘গেস্ট ব্যাজ’ পরে এক্স-এ ছবি শেয়ার করেন অল্টম্যান। ছবি দেখে সবাই বলতে থাকেন, তিনি আবারও আগের পদে ফিরছেন। গুঞ্জন জোরালো হওয়ার আগেই ইলিয়া সাটসকেভার জানিয়ে দেন, অল্টম্যান আর ফিরছেন না।
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা; যিনি ২০ নভেম্বর এক্সে পোস্ট দিয়ে জানান, অল্টম্যান ও ব্রকম্যান ছাড়াও তাদের অন্য সব সহকর্মী মাইক্রোসফটে যোগ দিচ্ছেন। ওপেনএআই প্রধান নির্বাহী হিসেবে এমেট শিয়ারকে নিয়োগের কিছুক্ষণ পরই সত্য নাদেলা এমন ঘোষণা দিয়ে বলেন, এটা জানাতে পেরে খুবই আনন্দিত যে স্যাম অল্টম্যান ও গ্রেগ ব্রকম্যান মাইক্রোসফটে যোগ দিচ্ছেন। তারা মাইক্রোসফটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক আধুনিক গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেবেন। তাদের সাফল্যের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা মাইক্রোসফটের তরফ থেকে যথাযথ আর দ্রুত সরবরাহ করা হবে।
এখানেই নাটকীয়তা শেষ হয়ে যেত। কিন্তু সহকর্মীরা তা হতে দেননি। ওপেনএআই কর্মীসংখ্যা প্রায় ৭০০। যার মধ্যে পাঁচ শতাধিক কর্মী উন্মুক্ত চিঠিতে পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগ ও স্যাম অল্টম্যানকে পুনর্বহালের দাবি জানান। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অল্টম্যানের ছাঁটাইয়ের পেছনে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়, সেই ইলিয়া সাটসকেভারও চিঠিতে সই করেন।
চিঠিতে জানা গেছে, প্রস্তাবিত দাবি পূরণ না হলে তারা একসঙ্গে পদত্যাগ করবেন। অল্টম্যানের সঙ্গে মাইক্রোসফটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দলে যোগ দেবেন। অল্টম্যানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওপেনএআই কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলতে শুরু করেন, তারা ছাড়া ওপেনএআই মূল্যহীন।
ওই দিনই ইলিয়া সাটসকেভার জানান, অল্টম্যানের ছাঁটাইয়ের পেছনে তাঁর ভূমিকার কারণে তিনি অনুশোচনায় ভুগছেন। সবাইকে আবারও একই ছাতার নিচে নিয়ে আসতে তিনি যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন। ছাঁটাইয়ের ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় ২১ নভেম্বর ওপেনএআই জানায়, স্যাম অল্টম্যান প্রধান নির্বাহী হিসেবেই প্রতিষ্ঠানে ফিরছেন। ওপেনএআই পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন পরিচালনা পর্ষদে আছেন তিনজন সদস্য। তারা হলেন সেলসফোর্সের সাবেক সহকারী প্রধান নির্বাহী ব্রেট টেইলর, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামারস এবং কিউওরার প্রধান নির্বাহী অ্যাডাম ডি’অ্যাঞ্জেলো। যার মধ্যে অ্যাডাম ডি’অ্যাঞ্জেলো আগের পরিচালনা পর্ষদেরও সদস্য ছিলেন।
মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার পর আবারও ওপেনএআইতে ফেরার পেছনে সত্য নাদেলার সম্মতি আছে বলেও সাফ জানান অল্টম্যান।
অল্টম্যানের বরখাস্তের পরে সহপ্রতিষ্ঠাতা গ্রেগ ব্রকম্যান কোম্পানির সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।
স্যাম অল্টম্যান মাইক্রোব্লগিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ওপেনএআইকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি। গত দিনগুলোতে আমি যা করেছি, তা কর্মী বাহিনী এবং মিশনকে একত্রে রাখার জন্যই করেছি।
কমেন্ট