কাশ্মীরে শান্তিপূর্ণ ভোট, লড়ছেন ১০ সাবেক ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীও’

কাশ্মীরে শান্তিপূর্ণ ভোট, লড়ছেন ১০ সাবেক ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীও’

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে বুধবার বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তিন দফা ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণা করা হবে ৮ অক্টোবর। নির্বাচনে ১০ জন সাবেক ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ প্রার্থীও আছেন। এই প্রার্থীরা কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন।


ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালে এই মর্যাদা প্রত্যাহার করে কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে। এরপর এই প্রথমবার কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ১০ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীর’ একজন হাফিজ মোহাম্মদ সিকান্দার মালিক। ৩৭ বছর বয়সী মালিক বর্তমানে জামিনে আছেন।


যেদিন মনোনয়ন দাখিল করতে গিয়েছিলেন, সেদিনও তার পায়ের গোড়ালিতে জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো ছিল।
২০১৯ সালে ‘সন্ত্রাসবাদের’ দায়ে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সিকান্দার মালিকসহ কয়েক ডজন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীকে’ সেই সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য পাঠানো হয়েছিল।


সাবেক ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ বলছেন, তারা নির্বাচিত হলে জম্মু ও কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসন মর্যাদা ফিরিয়ে আনবেন। তবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চলতি মাসেই বলেছেন, ওই মর্যাদা ‘এখন ইতিহাস এবং কেউ এটি ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’

মালিক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন, কারণ তার দল জামায়াতে ইসলামীকে ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটি জঙ্গিবাদের সমর্থন করে বলে নতুন দিল্লির অভিযোগ। রয়টার্সকে মালিক জানন, তার প্রধান লক্ষ্য তার দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং বিভিন্ন অভিযোগে বন্দি করে রাখা ব্যক্তিদের মুক্ত করা।


‘অন্য দলগুলো যেহেতু এসব নিয়ে কথা বলবে না, তাই আমরা এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই। নির্বাচিত হলে মানুষের ভালোর জন্য কাজ করব।’
এদিকে জম্মু ও কাশ্মীরে ১০ বছর পর বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। মঙ্গলবার ২৪টি কেন্দ্রের নির্বাচনে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়ল ৪১ শতাংশ। ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে। ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি এ বি রউফ গিয়ানি জানিয়েছেন, ‘সকাল থেকে বুথের সামনে লম্বা লাইন ছিল। প্রচুর মানুষ ভোট দিতে এসেছে। দুপুর ১২টার পর বুথে ভোটদাতাদের সংখ্যা কমে যায়। ৩টার পর আবার বাড়বে। কারণ কাশ্মীরে সচরাচর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কম ভোট পড়ে।’

এমনিতে ভোট এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ। কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। গত কয়েক দিন ধরে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে ভোটের দিন শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে। পুরো কাশ্মীরজুড়েই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা  পি কে পোল জানিয়েছেন, একেবারে শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। তাদের আশা, দিনের শেষে ভোটের হার ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

ভোটারদের চাওয়া-পাওয়া

কাশ্মীরের প্রধান দুটি দল হলো ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি। ১৯৪৭ সাল থেকে মূলত এই দুটি দলই পালা করে কাশ্মীর শাসন করে আসছে।

দুটি দলই জম্মু ও কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসন মর্যাদা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আব্দুল্লাহ, যিনি তার দাদা ও বাবার মতোই জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, ২০১৯ সালে মোদি সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত বদলে কাশ্মীরের ‘নিজের পরিচয় ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন’৷

কাশ্মীরের রাজনীতিতে মোদির বিজেপি দলের উল্লেখযোগ্য অবস্থান নেই। তাই ১৯৯৬ সালের পর এবারই প্রথম ভারতের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি কাশ্মীরে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তবে বিধানসভা নির্বাচনে ৯০ আসনের মধ্যে ৬২টিতে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। কেন্দ্রে বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস আধা-স্বায়ত্তশাসন মর্যাদা ইস্যুতে নিশ্চুপ। তবে বিধানসভা নির্বাচনে তারা ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে জোট গঠন করেছে।

কাশ্মীরের মূল দুই দলের বাইরে সংগঠিত হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। সাবেক ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেতা আব্দুল রশিদ শেখ এই দলের নেতা। গত সাধারণ নির্বাচনে তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহকে হারিয়েছেন। আরেক সাবেক জামাত নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়ার আহমাদ রেশি বলেছেন, ন্যায়বিচারের জন্য লড়ার একমাত্র উপায় নির্বাচন।

কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলো?

ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা বলেছেন, ‘প্রচুর নির্দল ভোটে দাঁড়িয়েছে। কাশ্মীরে অনেক বেশি নির্দলীয় প্রার্থী আছেন। এটা মানুষের ভোট ভাগ করার চেষ্টা। এটা ভোটদাতাদের মাথায় রাখা উচিত।’

ওমরের আশা, ‘মানুষ ন্যাশনাল কনফারেন্স-কংগ্রেস জোটকেই জিতিয়ে আনবে।’ তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এই জোটে সিপিএমও আছে। আমরা আমাদের কথা ভোটদাতার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এবার তারা কী রায় দেন, সেটাই দেখার।’

তিনি বলেছেন, ‘এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত ১০ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। জম্মু ও কাশ্মীরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। লাদাখকে আলাদা করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়েছে, এর ফলে কার লাভ হয়েছে কে জানে।’

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের অধিকার ফিরিয়ে দেব। জম্মু ও কাশ্মীরকে আগের মর্যাদা দেব। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবার একটি রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। এটা জম্মু ও কাশ্মীরের অপমান।’

বিজেপি নেতা জাবেদ আহমেদ কাদরি বলেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভালো করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বড় ভূমিকা নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এখানকার উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে। মানুষ তাই বিপুল সংখ্যায় এসে ভোট দিচ্ছে।’ বিজেপি নেত্রী ও কিস্তওয়ারে বিজেপি প্রার্থী শাগুন পারিহার বলেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরে বিজেপি বিপুল ভোটে জিতে সরকার গঠন করবে।’

 

ভারতজুড়ে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একই সঙ্গে করানোর প্রস্তাব মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেল 
পরবর্তী

ভারতজুড়ে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একই সঙ্গে করানোর প্রস্তাব মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেল

কমেন্ট