ঝাড়খণ্ড রাজ্যে নরেন্দ্র মোদির ভাষণেই এবার ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ প্রসঙ্গ

ঝাড়খণ্ড রাজ্যে নরেন্দ্র মোদির ভাষণেই এবার ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ প্রসঙ্গ

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে নির্বাচনের আগে বারবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে বিজেপি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বুধবার ঝাড়খণ্ডে এক জনসভায় বলেছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে ওই রাজ্যে।

এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো বিজেপি নেতারা একাধিকবার মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্যই ঝাড়খণ্ডের জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে। আদিবাসী-মূলবাসীরা অদূর ভবিষ্যতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতারা।


বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ অভিহিত করা বা ‘খুঁজে বের করে করে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ’ করার হুমকিও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা। বেশির ভাগ সময়ই বাংলাদেশ সরকার ওইসব মন্তব্যের পরও জোরালো প্রতিবাদ জানায়নি। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের এক জনসভায় অমিত শাহর মন্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ঢাকায় ভারতের উপরাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে প্রতিবাদ নোট দিয়েছে বাংলাদেশ।


এভাবে প্রতিবাদ জানানো অতি বিরল ঘটনা বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
কী বলেছেন নরেন্দ্র মোদি
ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনের আগে বিজেপি ‘পরিবর্তন যাত্রা’ নাম দিয়ে যে র‍্যালি করেছে, তার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে বুধবার হাজারিবাগে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির ওই ভাষণ পুরোটাই রয়েছে তার আনুষ্ঠানিক এক্স হ্যান্ডেলে।

রাজ্যের ক্ষমতাসীন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ও কংগ্রেসের জোট সরকারের উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘যারা সরকার চালাচ্ছে, তারা ঝাড়খণ্ডের পরিচয়ই বদলে দিতে চায়, তারা ঝাড়খণ্ডের শতাব্দী প্রাচীন নিজস্বতা ধ্বংস করে দিতে চায়।


এদের কর্তৃত্ব যাদের হাতে সেই কংগ্রেস চায় ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সমাজকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে। তারা জানে, চিরকাল তারাই আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে, কোনো দিন তাদের সামনের সারিতে আসতে দেয়নি। তাই ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা নতুন ভোটব্যাংক তৈরি করতে চাইছে।’
সাঁওতাল পরগণার উদাহরণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে ‘আদিবাসী জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে, অন্যদিকে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।’

একই সঙ্গে মোদি প্রশ্ন তোলেন, ‘জনবিন্যাসে বিপুল পরিবর্তন হচ্ছে, আদিবাসী আর হিন্দুদের সংখ্যা কমেছ।


আপনাদের কাছে জানতে চাই, ঝাড়খণ্ডে এই পরিবর্তন আপনাদের চোখে পড়ছে কি পড়ছে না? বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বাড়ছে কি বাড়ছে না?’
জনসভায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর আরো প্রশ্ন, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এখানে জমি দখল করছে কি না? ঝাড়খণ্ডের নারীদের, আদিবাসী নারীদের তারা নিশানা করছে কি না? আপনারা এই বিপদ দেখতে পাচ্ছেন, জনবিন্যাসে এই বদল দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু ঝাড়খণ্ড সরকারের চোখে পড়ছে না?’

জনবিন্যাস সত্যিই বদলাচ্ছে?
ক্ষমতাসীন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা-কংগ্রেস জোট বলছে, বারবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ এনে আদিবাসীদের মধ্যে মেরুকরণের চেষ্টা করছে বিজেপি। তাদের কথায়, ২৪ বছর হয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৬ বছরই ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। তখন কেন বিজেপি জনবিন্যাসের বদলের প্রসঙ্গ তোলেনি?

ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী অধিকার রক্ষায় সরব অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক দয়ামণি বার্লা সম্প্রতি কংগ্রেস দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জনবিন্যাসে বদল ঘটছে, সেটা কি বিজেপির এখন মনে হলো? এই রাজ্যের জন্ম হয়েছে ২৪ বছর হলো, তার মধ্যে বিজেপিই তো ১৬ বছর রাজত্ব করেছে। যদি সত্যিই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এখানে এসে থাকে, সেটা তাদের সরকার আটকাতে পারেনি কেন?’

তিনি আরো বলেন, ‘আবার সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বও তো কেন্দ্রীয় সরকারের। তাদের বিএসএফ কী করছে? এইসব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মেরুকরণ করার চেষ্টায় বারবার অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ তুলছে বিজেপি।’

বার্লা বলেন, ‘এটা ঠিকই আদিবাসী সমাজের বহু মানুষ জমি-জঙ্গল হারাচ্ছেন। কিন্তু কাদের কাছে? কারা আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুত করছে? কেন্দ্রীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিরাই তো জোর করে আদিবাসী জমি দখল করছে। কয়লাখনি অঞ্চলে আদিবাসীর সংখ্যা কমেছে ঠিকই। কিন্তু তাদের জমি তো হয় উন্নয়নমূলক প্রকল্পের নামে অথবা বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলির কারখানা ইত্যাদি বানানোর জন্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেই দায় কার?’

দয়ামণি বার্লা আরো বলেন, জমি-জঙ্গল হারিয়ে বহু আদিবাসীই এখন পরিযায়ী হয়ে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছেন। সেই পরিসংখ্যান থেকে এ রকম একটা ভুল ব্যাখ্যা দাড় করানো হচ্ছে যে আদিবাসীরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন ভবিষ্যতে। যে ব্যাখ্যা বার্লার মতে রাজনীতির জন্য করছে বিজেপি।

এ ছাড়া স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, ঝাড়খণ্ডে বহু বাংলাভাষী মুসলমান বাসিন্দা রয়েছে। তারা সেখানকারই আদি বাসিন্দা। বাংলায় কেউ কথা বলছে দেখলেই তাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে মনে করা হয় অনেক ক্ষেত্রে। সেটা অনুচিত।

ভোট এলেই অনুপ্রবেশকারী ইস্যু?

গাজার সরকারপ্রধানকে হত্যার দাবি ইসরাইলের পরবর্তী

গাজার সরকারপ্রধানকে হত্যার দাবি ইসরাইলের

কমেন্ট