ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্যকে ঢাল বানানোর চেষ্টায় কমলা

ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্যকে ঢাল বানানোর চেষ্টায় কমলা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। জনমত জরিপে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। এরই মধ্যে দেশটির চার কোটিরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আধুনিক সময়ে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে এটি।


তাই জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কমলা ও ট্রাম্প।
এরই অংশ হিসেবে গত রবিবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় প্রচারণা চালিয়েছেন কমলা। অন্যদিকে নিউ ইয়র্কে প্রচারণা চালানোর সময় কমলাকে ক্রমাগত আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া ট্রাম্পের কয়েকজন সমর্থকও অপমানজনক ও বর্ণবাদী বক্তব্য দিয়েছেন।


আর এই আক্রমণাত্মক বক্তব্যকে ঢাল বানাতে চাইছে ডেমোক্র্যাট শিবির।
গত রবিবার নিউ ইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে প্রচারণা চালান ট্রাম্প। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমরা এটা আর মেনে নেব না কমলা।



অবৈধ অভিবাসন বন্ধ এবং অভিবাসীদের নির্বাসনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশ দখলে নিয়েছে অভিবাসীরা। এটিকে ‘অভিবাসী আগ্রাসন’ আখ্যা দেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার প্রথম দিন আমি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসী নির্বাসন কর্মসূচি চালু করব। আগ্রাসনের শিকার ও দখল হয়ে যাওয়া প্রতিটি শহরকে উদ্ধার করব। আমি অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের দেশে অভিবাসী আগ্রাসনের ইতি হবে এবং আমাদের দেশের পুনরুদ্ধার শুরু হবে।



এ সময় ট্রাম্প শিবিরের বেশ কয়েকজন বক্তা কমলা হ্যারিসের পাশাপাশি পুয়ের্তো রিকো ও লাতিনদের অপমান করে বক্তব্য দেন। কৌতুক অভিনেতা টনি হিঞ্চক্লিফ লাতিন জনগোষ্ঠীর জন্মহার নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকোকে ‘আবর্জনার ভাসমান দ্বীপ’ আখ্যা দেন।

ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকো যুক্তরাষ্ট্রের আওতাধানী একটি অঞ্চল। এর বাসিন্দারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। তবে পুয়ের্তো রিকানদের একটি বড় অংশের বসবাস যুক্তরাষ্ট্রে, যারা ভোট দিতে পারে। 

টনি হিঞ্চক্লিফের এই অপমানজনক বক্তব্যের পর রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় শিবিরে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। তবে ট্রাম্পের প্রচার শিবির বলেছে, হিঞ্চক্লিফের বক্তব্য রিপাবলিকান প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে না।

তবে এই আক্রমণাত্মক বক্তব্যকে পুঁজি করে পুয়ের্তো রিকানদের ভোট পেতে চাইছেন কমলা। তাঁর প্রচার শিবির বলেছে, ট্রাম্পের এই সমাবেশ মারাত্মক বৈষম্যজনক।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে কমলা বলেন, ‘পুয়ের্তো রিকানদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট প্রাপ্য যিনি তাঁদের ওপর বিনিয়োগ করবেন।’ ওই ভিডিওতে ট্রাম্প সমর্থক টনি হেঞ্চক্লিফের অপমানজনক বক্তব্য যুক্ত করে দেন কমলা।

পুয়ের্তো রিকোর তারকা রিকি মার্টিন কমলার ওই ভিডিও নিজের ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘তাঁরা আমাদের সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করেন।’ তাঁর ইনস্টাগ্রামে এক কোটি ৮৬ লাখ অনুসারী রয়েছে। এ ছাড়া পুয়ের্তো রিকোর গায়ক ব্যাড বানি কমলার প্রতি সমর্থন দিয়ে তাঁর ভিডিও ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন। তাঁর অনুসারীর সংখ্যা চার কোটি ৫৬ লাখ।

এদিকে নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের সমাবেশে প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিয়েছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। রবিবার ম্যাডিসন স্কয়ারে ট্রাম্পের নির্বাচনী সমাবেশ শুরু হওয়ার চার ঘণ্টা পর মেলানিয়া মঞ্চে আসেন। ট্রাম্পের সমর্থক মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক তাঁকে মঞ্চে স্বাগত জানান।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া’ এবং ‘অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা’ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন মেলানিয়া। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মহিমার ওপর ভিত্তি করে একটি অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে পথচলা শুরু করি। আসুন, আমরা এই মুহূর্তটিকে আঁকড়ে ধরি এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে দেশ গড়ি। এমন ভবিষ্যত্, যেটা আমাদের প্রাপ্য।’

এ ছাড়া ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার এবং ফক্স নিউজের সাবেক সঞ্চালক টাকার কার্লসনের আক্রমণাত্মক বক্তব্যও বেশ সমালোচিত হচ্ছে। মিলার চিত্কার করে বলেন, ‘আমেরিকা শুধু আমেরিকানদের জন্য।’ একই সঙ্গে তিনি মাদক কারবারি ও অপরাধী অভিবাসীদের দমনের অঙ্গীকার করেন। অন্যদিকে কমলাকে একজন সামোয়ান মালয়েশীয় বংশোদ্ভূত অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন সাবেক কৌঁসুলি আখ্যা দেন কার্লসন।

এদিকে গত রবিবার পেনসিলভানিয়ার সবচেয়ে বড় শহর ফিলাডেলফিয়ায় প্রচারণা চালান কমলা। এর আগে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জা, নাপিতের দোকান ও পুয়ের্তো রিকানদের একটি দোকান পরিদর্শন এবং তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় পেনসিলভানিয়ায় এটি কমলার ১৪তম সফর।

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চান জার্মানির চ্যান্সেলর পরবর্তী

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চান জার্মানির চ্যান্সেলর

কমেন্ট