ইসরাইলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপ সিরিয়ার নৌবহর

ইসরাইলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপ সিরিয়ার নৌবহর

সিরিয়ার নৌবহরে হামলার কথা নিশ্চিত করেছে ইসরাইল। বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোকে অকার্যকর করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি, এটি তারই অংশ।

এক বিবৃতিতে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বলেছে, সোমবার রাতে আল-বাইদা ও লাতাকিয়া বন্দরে তারা হামলা করেছে, যেখানে সিরিয়ার নৌ বাহিনীর ১৫টি জাহাজ নোঙ্গর করা ছিলো।

লাতাকিয়া বন্দরে হামলার ভিডিও ফুটেজ বিবিসি ভেরিফাই করে দেখেছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে বন্দরের একাংশ এবং জাহাজগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আইডিএফ আরও জানিয়েছে যে তাদের যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়াজুড়ে সাড়ে তিনশোর বেশী বিমান হামলা করেছে। অন্যদিকে এর স্থলবাহিনী সিরিয়া ও দখলীকৃত গোলান মালভূমির মধ্যবর্তী বাফার জোনের সাময়িক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

এর আগে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বলেছে, রোববার সিরিয়ান বিদ্রোহীদের হাত আসাদ সরকারের উৎখাতের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩১০টি হামলার তথ্য রেকর্ড করেছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎয বলেছেন ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতি কৌশলগত যেসব হুমকি আছে সেগুলো ধ্বংসই তাদের লক্ষ্য। তিনি সিরিয়ার নৌবহর ধ্বংস করাকে বিশাল সাফল্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আইডিএফ অবশ্য আরও বিস্তৃত হামলার তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে এয়ারফিল্ড, সামরিক যানবাহন, বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র এবং অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর কিছু সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে। আর কিছু হোমস, তারতাস ও পালমিরায়।

এর বাইরে গোডাউন, গোলাবারুদের মজুত এবং কয়েক ডজন সাগর থেকে সাগরে উৎক্ষেপনযোগ্যও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাও ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিলো।

ইসরাইলের দাবি এগুলো যাতে উগ্রপন্থীদের হাতে না যায় সেজন্যই তারা এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

এক ভিডিও বার্তায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাতকারী বিদ্রোহী গ্রুপ হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএসকে উদ্দেশ্যে করে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন তারা যদি ইরানকে সিরিয়ায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে তাহলে ইসরাইলকে শক্তি প্রয়োগ করেই জবাব দিতে হবে। এর আগে তিনি সিরিয়ার নতুন সরকারের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন।

এসওএইচআর এর প্রতিষ্ঠাতা রামি আব্দুর রহমান বলেছেন, ইসরাইলের হামলায় সিরিয়ার আর্মির সব সক্ষমতা ধ্বংস হচ্ছে। তার মতে সিরিয়ার সার্বভৌমত্বও লঙ্ঘিত হয়েছে।

অন্যদিকে আইডিএফ ইসরাইলি অধিকৃত গোলান উপত্যকার সীমান্তে বাফার জোনের বাইরে তাদের সেনা অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছে।

তারা স্বীকার করেছে যে সিরিয়ার ভূমিতে তাদের সেনারা প্রবেশ করেছে, তবে রাজধানী দামেস্ক অভিমুখে ট্যাংক যাওয়ার খবর অসত্য বলে বিবিসিকে জানিয়েছে।

ইসরাইলের হামলায়

তাদের কিছু সেনা গোলান মালভূমিতে সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্তের ‘এরিয়া অফ সেপারেশন’সহ আর কিছু এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।

আইডিএফ এর মুখপাত্র নাদাভ শশানি, যখন আমরা আরও কিছু এলাকার কথা বলছি তার মানে হলো আমরা এরিয়া অফ সেপারেশন বা বাফার জোন এলাকার কথা বলছি। 

আইডিএফ সৈন্যদের অবস্থানের ছবি বিবিসি বিশ্লেষণ করেছে। একজন সৈন্য গোলান উপত্যকার বেসামরিকীকরণ করা বাফার জোন অতিক্রম করে আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলো। সেটি সিরিয়ার মধ্যে একটি গ্রামের পাহাড়ি এলাকা।

সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বাফার জোন অতিক্রম করা সৈন্যদের ছবি প্রকাশ করেছিলো। সিরিয়ার মধ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা সেখানে অবস্থান করছে।

বাফার জোনে সিরিয়ান অবস্থান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিষয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে এটি একটি সুবিধাজনক ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা।

তিনি বলছেন, সিরিয়ার নতুন শক্তির সঙ্গে আমরা প্রতিবেশীসূলভ ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি, সেটিই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু যদি তা না হয় তাদের ইসরাইল রাষ্ট্র ও এর সীমান্ত সুরক্ষায় আমাদের যা করতে হয় আমরা তাই করবো। 

তবে ইসরাইলি সৈন্যদের বাফার জোটে প্রবেশের নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি এটিকে একটি স্পর্শকাতর সময়ে ইসরাইলের দখলদারিত্বের মানসিকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তার মতে এটি এমন সময়ে হচ্ছে যখন সিরিয়ান জনগণের বহু বছরের আকাঙ্ক্ষিত শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সিরিয়া এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে

বাফার জোন হলো দুটি দেশের মধ্যবর্তী একটি নিরপেক্ষ এলাকা। এটিই এরিয়া অফ সেপারেশন হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৪ সালে ইসরাইলি ও সিরিয়ান বাহিনীকে আলাদা রাখার জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো।

এর আগে ইসরাইল গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছিলো। ১৯৮১ সালে গোলানকে তারা এককভাবেই নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতি তারা না পেলেও যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে এর স্বীকৃতি দিয়েছে।

এদিকে সোমবার হামলার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন ইসরাইলের উদ্বেগ শুধু নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা নিয়ে।

তিনি বলেন, এজন্যই আমরা রাসায়নিক অস্ত্র কিংবা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কৌশলগত অস্ত্রের ওপর হামলা করেছি। যাতে করে এগুলো উগ্রপন্থীদের হাতে চলে না যায়। 

সোমবার জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়া কর্তৃপক্ষকে রাসায়নিক অস্ত্রের সন্দেহভাজন মজুত নিরাপদ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছিলো। তবে সিরিয়ার কোথাও কতটা রাসায়নিক অস্ত্র আছে তা নিশ্চিত নয়। তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে প্রেসিডেন্ট আসাদ এর মজুত রেখেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট আসাদ দামেস্ক ছেড়ে যাওয়ার পরপরই ইসরাইল হামলা শুরু করে। তিনি ও তার পিতা ১৯৭১ সাল থেকে দেশটি শাসন করে আসছিলেন।

বোরবার এইচটিএস দামেস্ক দখল করে আসাদ সরকারকে উৎখাত করে। এরপরই তারা ঘোষণা দেয় যে ‘সিরিয়া এখন মুক্ত’।

আসাদের পতনের পরও মার্কিন সেনারা সিরিয়ায় থাকবে: হোয়াইট হাউজ পরবর্তী

আসাদের পতনের পরও মার্কিন সেনারা সিরিয়ায় থাকবে: হোয়াইট হাউজ

কমেন্ট