ট্রাম্পের চিঠি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করল ইরান, মধ্যস্থতায় আমিরাতের উপদেষ্টা

ট্রাম্পের চিঠি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করল ইরান, মধ্যস্থতায় আমিরাতের উপদেষ্টা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি চিঠি তেহরানের নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।  ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে।  

এই চিঠি এমন সময়ে এসেছে যখন ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, একই সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।  

গত সপ্তাহে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন, যেখানে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তির আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তেহরানের সামনে দুটি পথ খোলা—ওয়াশিংটনের শর্তে আলোচনায় বসা বা সামরিক হামলার সম্মুখীন হওয়া।  

এই প্রস্তাব খামেনি দ্রুত প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত দাবি ও হুমকির মুখে ইরান কোনো আলোচনায় বসবে না।’  

মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘তুমি যা খুশি তাই কর’, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ খবর জানানো হয়।  

কৌশলগত সম্পর্ক, উত্তেজনার মাঝেও সংযুক্তি  

সংযুক্ত আরব আমিরাত, যা উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং মার্কিন সেনাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, ইরানের সঙ্গে জটিল কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী রয়েছে, যেখানে দুবাই ইরানি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।  

ট্রাম্প একদিকে নতুন চুক্তির ইঙ্গিত দিলেও তার প্রশাসন ‘সর্বোচ্চ চাপ নীতিতে ফিরে গেছে, যার মাধ্যমে ২০১৮ সালে একতরফাভাবে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর ফলে তেহরানের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, বিশেষ করে তাদের তেল রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়।  

ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ 

পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গত মাসে জানিয়েছে, তেহরানের ইউরেনিয়াম মজুদ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েছে, যা ৯০ শতাংশে পৌঁছালে অস্ত্র-মানের উপাদানে পরিণত হতে পারে।  

বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) ছয়টি সদস্য দেশের অনুরোধে একটি গোপন বৈঠক করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছে।  

এই বৈঠকের সমালোচনা করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, এটি একটি ‘নতুন ও অদ্ভুত’ পদক্ষেপ যা কূটনৈতিক সদিচ্ছাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তিনি জানান, ইরান এখনও ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় যুক্ত রয়েছে, তবে ইউএনএসসি বা আইএইএ যদি তেহরানের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে, তাহলে এই আলোচনার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।  

এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে বেইজিং ও মস্কো শুক্রবার ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে, যেখানে ইরানের পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।  

আরাগচি বলেন, আমাদের আলোচনাগুলো ইউরোপীয়দের সঙ্গে চলবে। তবে যদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বা আইএইএ আমাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে, তাহলে আলোচনার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।  

এসডিএফের সঙ্গে সিরিয়ার নতুন সরকারের ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তি’কে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী

এসডিএফের সঙ্গে সিরিয়ার নতুন সরকারের ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তি’কে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

কমেন্ট